দৃষ্টি আকর্ষন
সব সময় সর্বশেষ সংবাদ জানতে দৈনিক দেশপ্রেম নিজে পড়ুন এবং অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করুন ........... আপনার এলাকার যে কোন সংবাদ আমাদের ছবিসহ জানান-আমরা সেটি প্রকাশ করবো দৈনিক দেশপ্রেম পত্রিকায়, নিউজ পাঠান dailydeshprem@gmail.com এই ইমেইলে ............ আপনার পণ্যের খবর সকলের কাছে দ্রুত পৌছাতে দৈনিক দেশপ্রেম পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন ..........
শিরোনাম :
নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আবেদনের সময়সীমা দুই মাস বাড়ানো হলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ও উপদেষ্টা আসিফ-মাহফুজের পদত্যাগ চাইলেন সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারি হলেন মোহাম্মদ সুফিউর রহমান শান্তিরক্ষী মিশনে আরও নারী সদস্য নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা একই ব্যক্তি সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান হতে পারবে না- এমন চর্চা আমরা দেখি না : বিএনপি বিএনপি বৈঠক করলো সিপিবি, বাসদসহ বাম নেতাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির রওশনপন্থিরা জি এম কাদেরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করলো গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই, আর এটি কাউকে চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয় : মির্জা ফখরুল বিচার ও সংস্কারের জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন অন্তর্বর্তী সরকার ততটুকু সময় পেতে পারে : এনসিপি ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির বৈঠক
করোনার প্রভাবে ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য গোলা খুলে দিলেন কৃষক রফিকুল ইসলাম

করোনার প্রভাবে ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য গোলা খুলে দিলেন কৃষক রফিকুল ইসলাম

হেলথ ডেস্ক, ১৭ এপ্রিল ২০২০ইং (দেশপ্রেম রিপোর্ট): করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া হতদরিদ্র ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য নিজের ঘরের গোলা খুলে দিয়েছেন কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা এক কৃষক। গ্রামের খেটে খাওয়া ও দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো প্রতিদিনই ভীড় করছেন তার বাড়িতে। কাউকেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন না খালি হাতে। প্রতিজনকেই অন্তত পাঁচ কেজি থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত চাল তুলে দিচ্ছেন।

অতীত জীবনের অভিজ্ঞতা লব্ধ তিক্ত উপলব্ধি থেকেই তার এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন মানবতাবাদী এ মানুষ। তার সহযোগিতায় দীর্ঘ কয়েকদিন থেকে দুবেলা খেয়ে বেঁচে আছে কয়েকশ’ অসহায় পরিবার। ঘটনাটি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম হাজিপাড়ার।

গত কয়েকদিন যাবত এ সংক্রান্ত খবর পাওয়া যাচ্ছিল বিভিন্ন জন থেকে। তাই বিষয়টি যাচাই করতে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সরেজমিনে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়। পথেই দেখা যায়, দলে দলে লোকজন চাল নিয়ে ফিরছেন ওই গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে।

বাড়িতে পৌঁছে দেখা যায়, উঠানে প্রায় অর্ধ শতাধিক হতদরিদ্র মানুষ। ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা এসেছেন কিছু চালের জন্য। ঘরের বারান্দায় রাখা বস্তা থেকে পাঁচ কেজি করে চাল মেপে দিচ্ছেন কৃষক রফিকুল। একে একে প্রত্যেককেই চাল দিলেন তিনি। তাকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী গৃহিনী মনি বেগম ও বড় ছেলে সৈয়দপুর শহরের জামে আরাবিয়া মাদরাসার নুরানী বিভাগের ছাত্র মুরাদ ইসলাম (১০)। আগতদের দেয়া শেষ না হতেই আরও অনেকে এসে উপস্থিত। কিন্তু তারপরও কৃষক পরিবারের কারো মুখে নেই বিন্দু মাত্র বিরক্তি বা বিষাদের ছাপ। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গেই সবাইকে চাল দিয়ে চলেছেন তারা।

এরই ফাঁকে কথা হয় ৪ নম্বর ওয়ার্ডেরই হুকলিপাড়া ও খোর্দ্দপাড়া থেকে আসা কয়েকজনের সঙ্গে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী যুবক শাহিন বলেন, গত প্রায় এক সপ্তাহ যাবত রফিকুল ইসলাম তার পাড়াসহ আশে পাশের কয়েকটি পাড়ার হতদরিদ্র মানুষকে তার সামান্য সামর্থ দিয়েই সহযোগিতা করে চলেছেন। যা এলাকার অনেক ধনী ব্যক্তিও করছেন না।

তিনি বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও সরকারি ত্রাণ না আসার অজুহাতে এগিয়ে আসেনি। তারা ব্যক্তিগতভাবে কোনো সহযোগিতাই করছেন না সাধারণ খেটে খাওয়া ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে। এ অবস্থায় রফিকুল ইসলাম তার ভান্ডার খুলে দিয়েছেন এলাকাবাসীর জন্য। ফলে ভিক্ষুক থেকে শুরু করে রিকশা-ভ্যানচালক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র দোকানদার, ফেরিওয়ালাসহ নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত যারাই অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তারা কিছুটা হলেও সহায়তা পাচ্ছেন। এতে অন্যান্য এলাকার মতো আমাদের এলাকায় তেমন হাহাকার পরেনি।

হতদরিদ্র লক্ষী রানী বলেন, রফিকুল ভাইয়ের বলতে গেলে কিছুই নাই। সামান্য কৃষি কাজ করে সংসার চালায়। কিন্তু তা থেকেই তিনি যেভাবে আমাদের মতো গরীবের জন্য এতবড় কাজ করছেন। এটা দেখে ধনী মানুষগুলোর শিক্ষা নেয়া উচিত।

মো. সলিম বলেন, চেয়ারম্যান মেম্বাররাও যেখানে ত্রাণ দিতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে রফিকুল ভাই যে এমন একটা সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু এতে তার বিন্দুমাত্র অহংবোধ নেই। বরং তার কথা বিপদেই যদি মানুষের পাশে না দাঁড়াতে পারি তাহলে কী হবে বেঁচে থেকে।

অমিছা বেগম নামে আরেকজন বলেন, এক মাস ধরি ভিক (ভিক্ষা) করির পারিছি না। ঘরত এক দানা খাবার নাই। মেম্বারের কাছত গেইলে কয়ছে সরকারি ত্রাণ যতনা আসিছে তাক শেষ। পাড়ার মাইনসের কাছে শুনি আনু রফিকুলের বাড়িত। এলা পাঁচ কেজি চাউল পাছো। আরও মেলা মানুষ যায় আসছে তায় পাইছে। আল্লাহ ভালো করুক।

চাল দেয়ার মাঝে এক মুহূর্তের জন্য কথা হয় কৃষক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি তেমন শিক্ষিত মানুষ নই। জীবনে অনেক কষ্ট করে বর্তমান পর্যায়ে এসেছি। এক সময় আমিও ক্ষুধার জ্বালায় অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করেছি। কিন্তু কারো কাছে হাত পাততে পারিনি। তাই জানি এমন পরিস্থিতিতে মানুষ কতটা অসহায় হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, আজ আমি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে যে ফসল ফলাই তা দিয়ে কোনো রকমে চলি। এভাবেই একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট দুটি ছেলেকে নিয়ে আমার সংসার। ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ গৃহস্থালী বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীই করেছি। এখন আমি একজন স্বচ্ছল কৃষক। আমার ঘরে যেটুকু ধান বা চাল আছে তা থেকে আমার পরিবারের এক সপ্তাহের জন্য রেখে বাকি সবটুকু যতক্ষণ সম্ভব বিলিয়ে দিবো। কারণ এবার যে আবাদ করেছি এক মাস পরেই তা থেকে ইনশাআল্লাহ পর্যাপ্ত ফসল পাবো।

কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি রাতে এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখি কারা প্রকৃতপক্ষে অভাবে আছে। কিন্তু লোক লজ্জায় কারো কাছে চাইতেও পারছেন না। এসব মানুষকে গোপনেই চাল পৌঁছে দিচ্ছি। যাতে তারা সমাজে হেয় প্রতিপন্ন না হোন। এভাবেই আমার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজন পড়লে স্ত্রীর স্বর্ণালংকার যেটুকু আছে তা বিক্রি করে হলেও গরীব মানুষগুলোকে সহযোগিতা করে যাবো। কারণ সৃষ্টির সেবার মাঝেই স্রষ্টার সন্তুষ্টি বিদ্যমান। ইচ্ছে আছে আগামী ঈদে অসহায় প্রতিটি পরিবারকে একটা লুঙ্গি, শাড়ি, সেমাই, চিনি ও ৫০০ টাকা করে দেয়ার। দোয়া করবেন যেন আমার এই ইচ্ছে পূরণ করতে পারি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© Copyright 2012 Daily Deshprem Design & Developed By Mahmud IT